এত দিন ধরে মাঠে অনেকটা একতরফা আলোচনায় ছিলেন সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি আবদুল কাইয়ুম চৌধুরী। তবে এখন ভোটের মাঠে তাঁকে ‘ঠেক্কা দিতে’ আলোচনায় আছেন বিএনপির দুজন প্রবাসী নেতা। তাঁরা হলেন বিএনপির কেন্দ্রীয় আন্তর্জাতিক–বিষয়ক সম্পাদক মো. আবদুস সালাম এবং যুক্তরাজ্য বিএনপির সভাপতি ও দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা এম এ মালেক।
বিএনপির এই তিন নেতা সিলেট-৩ (দক্ষিণ সুরমা, ফেঞ্চুগঞ্জ ও বালাগঞ্জ) আসনে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপিদলীয় প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে আগ্রহী। এ কারণে তাঁরা এবং তাঁদের কর্মী-সমর্থকেরা নির্বাচনী এলাকায় তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছেন। প্রায় প্রতিদিনই তাঁদের পক্ষে কর্মী-সমর্থকেরা নানা ধরনের অনুষ্ঠান ও সভা-সমাবেশ আয়োজনের মাধ্যমে নিজেদের অবস্থান জানান দিচ্ছেন।
স্থানীয় বিএনপির নেতা-কর্মীরা বলছেন, বিগত কয়েকটি সংসদ নির্বাচনের মতো সর্বশেষ একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও আবদুল কাইয়ুম চৌধুরী ও আবদুস সালাম দলীয় মনোনয়ন চেয়েছিলেন। তবে ২০১৮ সালে এখানে দলীয় মনোনয়ন পান সাবেক সংসদ সদস্য ও বিএনপির তৎকালীন কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য শফি আহমদ চৌধুরী। ২০২১ সালে দলের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে উপনির্বাচনে প্রার্থী হওয়ায় শফি আহমদ বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত হন। এ অবস্থায় শফির স্থলাভিষিক্ত হতে বিএনপির অন্যান্য মনোনয়নপ্রত্যাশী এবার তৎপরতা বাড়ান।বর্তমানে আবদুল কাইয়ুম চৌধুরী ও আবদুস সালাম নির্বাচনী এলাকায় তৎপর রয়েছেন। ইফতারি বিতরণ থেকে শুরু করে তাঁরা দলীয় নেতা-কর্মীদের নিয়ে নানা সভা-সমাবেশও করছেন। অন্যদিকে এম এ মালেক প্রবাসে থাকলেও তাঁর সমর্থক নেতা-কর্মীরা নিয়মিত ছোট-বড় সভা-সমাবেশের মধ্য দিয়ে প্রচারণা চালাচ্ছেন।
কাইয়ুমের সমর্থকেরা বলছেন, আবদুল কাইয়ুম চৌধুরী সৎ, দক্ষ, দায়িত্বশীল ও জনবান্ধব নেতা হিসেবে কর্মী-সমর্থকদের কাছে গ্রহণযোগ্য। ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক এই দপ্তর সম্পাদক যুবদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক ও সহসভাপতি হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। তিনি সাবেক অর্থ ও পরিকল্পনামন্ত্রী এম সাইফুর রহমানের রাজনৈতিক সচিব হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। ২০২২ সালের ২৯ মার্চ ভোটের মাধ্যমে তিনি জেলা বিএনপির সভাপতি নির্বাচিত হন। ২০২৩ সালের ২৯ অক্টোবর থেকে ২০২৪ সালের ১২ মার্চ পর্যন্ত সিলেটে বিএনপির আন্দোলন-সংগ্রামের সমন্বয়কারী ও সিলেট বিভাগের সাংগঠনিক দায়িত্বে ছিলেন।কাইয়ুমের দুজন সমর্থক বলেন, এ আসনে কাইয়ুম চৌধুরীর মতো নিবেদিতপ্রাণ ও কর্মিবান্ধব ব্যক্তিকেই দলীয় মনোনয়ন দেওয়া উচিত। পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনামলে প্রতিটি আন্দোলন-সংগ্রামে কাইয়ুম চৌধুরী সামনের সারিতে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। ৪ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে নেতৃত্ব দিতে গিয়ে আহতও হন। সিলেটে বিগত দুটি বন্যায় তাঁর নেতৃত্বে ব্যাপকভাবে ত্রাণ বিতরণ করে বিএনপি প্রশংসা কুড়িয়েছে। পতিত আওয়ামী লীগের শাসনামলে অসংখ্য মামলার আসামিও হন কাইয়ুম চৌধুরী। বিপরীতে মনোনয়নপ্রত্যাশী অপর দুই নেতা আন্দোলন-সংগ্রাম চলাকালে দেশের বাইরে ছিলেন।
যোগাযোগ করলে আবদুল কাইয়ুম চৌধুরী বলেন, ‘নির্বাচনে কে মনোনয়ন পাবেন, সেটা দলের সিদ্ধান্ত। এটা নিয়ে আমি এই মুহূর্তে কিছুই ভাবছি না। তবে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশনায় দলকে সুসংগঠিত রাখতে নিরন্তর কাজ করে চলেছি।’এদিকে যুক্তরাজ্যপ্রবাসী এম এ মালেক দীর্ঘ ১৯ বছর পর গত ১৭ অক্টোবর দেশে আসেন। এ সময় তিনি নিজের গ্রামের বাড়ি দক্ষিণ সুরমা উপজেলার তেতলিতে অবস্থান করে নির্বাচনী এলাকার তিন উপজেলায় কিছু সভা-সমাবেশে অংশ নিয়ে কিছুদিন পর দেশ ছাড়েন। দেশে থাকাকালে একাধিক সভায় তিনি আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার ইঙ্গিতও দেন।এম এ মালেকের অনুসারীরা বলছেন, তাঁদের নেতা দেশ ছেড়ে প্রবাসে গেলেও নেতা-কর্মীদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন। তিনি সশরীর উপস্থিত না থাকলেও তাঁর অনুসারী-সমর্থকেরা দক্ষিণ সুরমা, ফেঞ্চুগঞ্জ ও বালাগঞ্জে চিকিৎসাশিবির, শীতবস্ত্র বিতরণ, খেলাধুলাসহ নানা ধরনের অনুষ্ঠান আয়োজন করছেন। এসব কর্মসূচিতে জাতীয় ও স্থানীয় নেতারা অতিথি হিসেবে অংশ নিচ্ছেন।দেশের বাইরে থাকায় মালেকের বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে তাঁর এক অনুসারী বলেন, তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে কথা বলায় ২০২১ সালের ২৭ এপ্রিল এম এ মালেকের গ্রামের বাড়িতে হামলা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছিল। তিনি প্রবাসে আওয়ামী লীগ ও দলটির ফ্যাসিস্ট সভাপতি শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে নিয়মিত বক্তব্য-বিবৃতি দিয়ে দলের ভেতরে-বাইরে আলোচিত হয়েছেন। তাঁর মতো দলবান্ধব একজন নেতা দলীয় মনোনয়ন পেলে কর্মীরা আনন্দিত হবেন।এদিকে যুক্তরাজ্যপ্রবাসী আবদুস সালামও মাঠপর্যায়ে ব্যাপকভাবে কাজ করছেন। বিএনপির একাংশের কর্মী-সমর্থকদের সঙ্গেও তাঁর হৃদ্যতা রয়েছে। সালামের সমর্থকেরা বলছেন, বিএনপির প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই তিনি দলটির আদর্শে উজ্জীবিত হয়ে রাজনীতি করছেন। মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ছাত্র থাকাবস্থায় ছাত্রদলের মাধ্যমে রাজনীতিতে তাঁর হাতেখড়ি। ১৯৯১, ১৯৯৬, ২০০১ ও ২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীর পক্ষে বলিষ্ঠ ভূমিকা রেখেছেন। ১৯৯৬, ২০০৮ ও সর্বশেষ ২০১৮ সালে দলীয় মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন। তবে মনোনয়ন না পেলেও দলের প্রার্থীর পক্ষে কাজ করেছেন।সালামের অনুসারীদের মতে, দক্ষ সংগঠক ও সদালাপী সালাম এলাকায় শিক্ষা, ক্রীড়া, সংস্কৃতি, যুব উন্নয়ন ও সমাজসেবায় প্রতিনিয়ত কাজ করে চলেছেন। দেশ-বিদেশে দলের ভাবমূর্তিকে উজ্জ্বল রাখতে নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করছেন। এ কারণে এলাকার অনেকেই মনে করেন, বিএনপি তাঁকে দলীয় মনোনয়ন দেবে।আবদুস সালাম বলেন, ‘এখনো নির্বাচনী রোডম্যাপ দেওয়া হয়নি। নির্বাচনের সময় আসুক, দেখা যাবে। তবে আমি আশাবাদী। ছাত্রদলের রাজনীতি দিয়ে শুরু করে এখন বিএনপির রাজনীতিতে আছি। দলের জন্য কাজ করছি। পতিত স্বৈরাচারী হাসিনা সরকারের আমলে অসংখ্য মামলা মাথায় নিয়ে সেসব মোকাবিলা করে দেশে দলীয় নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কাজ করেছি।’ প্রবাসে অবস্থান করা প্রসঙ্গে আবদুস সালাম বলেন, ‘পড়াশোনার জন্য আমি লন্ডন গিয়েছিলাম। তবে দেশেই বেশির ভাগ সময় থাকি। ঢাকায় সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী হিসেবে পেশাগত দায়িত্ব পালন করছি। মোটকথা, আমি সব সময় এলাকার সঙ্গেই সম্পৃক্ত থাকি।’