২৮ জুলাই, ২০২৫lastnewsbdপ্রশাসনEnglish Highlightsচট্রগ্রাম নিউজফটো গ্যালারিগনমাধ্যমঅর্থনীতিজাতীয়রাজনীতিমতামতআইন-আদালতস্বাস্থ্যতথ্যপ্রযুক্তিবিনোদনচাকরি খবরলাইফস্টাইলজেলার খবরআন্তর্জাতিকখেলারাজধানীশিক্ষাপ্রবাসধর্মমুসলিমদের ঘরবাড়ি গুঁড়িয়ে দিয়ে বাংলাদেশে বিতাড়ন করছে ভারতপ্রকাশিত: ১২:৪৯:০০ অপরাহ্ণ, ২৮ জুলাই, ২০২৫imgসংগৃহীত ছবিভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য আসামে মুসলিমদের উচ্ছেদ ও বাংলাদেশে বিতাড়ন করছে ভারত। গত কয়েক সপ্তাহে হাজারো মুসলিম পরিবারের ঘরবাড়ি বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দিয়েছে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ। মুসলিমদের লক্ষ্য করে চালানো এই দমন অভিযানে প্রাণহানির ঘটনাও ঘটেছে। সোমবার (২৮ জুলাই) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স।বার্তাসংস্থাটি বলছে,g বাংলাদেশ সীমান্তঘেঁষা ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় আসাম রাজ্যের একটি কোণে নীল ত্রিপল দিয়ে তৈরি অস্থায়ী আশ্রয়ে শত শত মুসলিম পুরুষ, নারী ও শিশু বাস করছেন। সম্প্রতি তাদের ঘরবাড়ি থেকে উচ্ছেদ করা হয়েছে। আসামে আসন্ন রাজ্য নির্বাচনকে ঘিরে এটিই এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বড় উচ্ছেদ অভিযান।
গত কয়েক সপ্তাহে হাজারো পরিবারের ঘরবাড়ি বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দিয়েছে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ। কর্তৃপক্ষের দাবি, এসব মানুষ সরকারি জমি দখল করে অবৈধভাবে বসবাস করছিল।ভারতের ক্ষমতাসীন হিন্দুত্ববাদী দল বিজেপি আসামে আগামী বছর ফের নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে। এদিকে ২০২৪ সালের আগস্টে বাংলাদেশে ভারতপন্থি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পতন এবং ভারতজুড়ে “বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী” হিসেবে আখ্যায়িত করে বাংলাভাষী মুসলিমদের বিরুদ্ধে জাতীয় পর্যায়ের দমন অভিযান শুরু হয়েছে। মূলত আসামের সাম্প্রতিক এই উচ্ছেদও সেই ধারাবাহিকতার অংশ।আসামের গোলপাড়া জেলায় উচ্ছেদ হওয়া এক বাসিন্দা হচ্ছেন ৫৩ বছর বয়সী আরান আলী। তিনি বলেন, “সরকার বারবার আমাদের হয়রানি করে। আমরা তো এখানেই জন্মেছি। তবু আমাদের ‘অনুপ্রবেশকারী’ ও ‘বিদেশি’ বলা হয়।”
আরান আলী এখন তার তিন সদস্যের পরিবার নিয়ে খোলা জায়গায় মাথা গোঁজার ঠাঁই খুঁজছেন।বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের ৪০৯৭ কিলোমিটার দীর্ঘ সীমান্তের মধ্যে আসাম রাজ্য ২৬২ কিলোমিটারজুড়ে বিস্তৃত। বহুদিন ধরেই সেখানে বাংলাদেশি অভিবাসন নিয়ে ভয় ও ক্ষোভ থেকে বিদেশি বিরোধী মনোভাব রয়েছে, বিশেষ করে বাংলা ভাষাভাষী হিন্দু ও মুসলিম উভয়ের বিরুদ্ধেই। স্থানীয়দের ধারণা, এদের উপস্থিতি আসামের সংস্কৃতি ও অর্থনীতিকে বিপন্ন করছে।তবে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির দল বিজেপির নেতৃত্বাধীন সরকারের চলমান অভিযান কেবল মুসলিমদের লক্ষ্য করেই চালানো হচ্ছে, যা ইতোমধ্যে বিক্ষোভ ও প্রাণহানির ঘটনা ঘটিয়েছে। আসামের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা সম্প্রতি বলেছেন, “বাংলাদেশি মুসলিম অনুপ্রবেশকারীরা ভারতের পরিচয়কে হুমকির মুখে ফেলছে।”
মূল বিরোধী দল কংগ্রেস ২০১৬ সালের নির্বাচনে হেরে বিজেপির কাছে ক্ষমতা হারিয়েছিল। দলটি জানিয়েছে, তারা ক্ষমতায় ফিরলে গুঁড়িয়ে দেওয়া বাড়িগুলো পুনর্নির্মাণ করবে এবং যারা এসব ধ্বংস করেছে, তাদের কারাগারে পাঠাবে।“বাংলাদেশে পুশব্যাক”আসামে এই উচ্ছেদের মাত্রা বেড়েছে কাশ্মিরে হিন্দু পর্যটকদের ওপর চালানো একটি প্রাণঘাতী হামলার পর। পাকিস্তান-ভিত্তিক সন্ত্রাসীদের ওপর এর দায় চাপানো হয়েছিল। এরপর বিজেপি-শাসিত রাজ্যগুলো হাজার হাজার বাংলাভাষী মুসলিমকে ‘অবৈধ অভিবাসীও নিরাপত্তা হুমকি বলে গ্রেপ্তার করে
সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম এক্স-এ (সাবেক টুইটার) দেওয়া এক বার্তায় তিনি বলেন, “নির্ভয়ে সীমান্ত পেরিয়ে আসা মুসলিম অনুপ্রবেশকারীদের বিরুদ্ধেই প্রতিরোধ গড়ে তুলছি আমরা, কারণ এতে ভয়াবহ জনমিতিক পরিবর্তন ঘটেছে।”তিনি দাবি করেন, আসামের ৩১ মিলিয়ন জনসংখ্যার ৩০ শতাংশই অভিবাসী মুসলিম (২০১১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী)। তার মতে, “আরও কয়েক বছরের মধ্যে রাজ্যের সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর হার ৫০ শতাংশে পৌঁছাবে।”রয়টার্সের অনুরোধ সত্ত্বেও মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত শর্মা এই বিষয়ে কোনও মন্তব্য করেননি।“সহজ টার্গেট”বিজেপি বরাবরই ভারতকে হিন্দুদের প্রাকৃতিক আবাসভূমি হিসেবে দেখে এবং দেশটির বৃহৎ মুসলিম জনগোষ্ঠী মোকাবিলায় নানা নীতিমালা গ্রহণ করেছে। ২০১৯ সালে তারা ভারতের নাগরিকত্ব আইন সংশোধন করে প্রতিবেশী দেশ থেকে আসা অমুসলিম অনথিভুক্ত অভিবাসীদের নাগরিকত্ব দেওয়ার পথ খুলে দেয়।২০২১ সালের মে মাসে ক্ষমতায় আসার পর থেকে হিমন্ত শর্মার সরকার এখন পর্যন্ত প্রায় ৫০ হাজার মানুষকে উচ্ছেদ করেছে। যাদের বেশিরভাগই বাংলা ভাষাভাষী মুসলিম।সরকারি তথ্য বলছে, মাত্র গত এক মাসেই আসামের পাঁচটি এলাকায় প্রায় ৩ হাজার ৪০০ মুসলিম পরিবারের ঘরবাড়ি গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এর আগে ২০১৬-২০২১ মেয়াদে প্রায় ৪ হাজার ৭০০ পরিবার উচ্ছেদের শিকার হয়েছিল।ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের জ্যেষ্ঠ বিশ্লেষক প্রভীন দন্তি বলেন, “বাংলাভাষী মুসলিমরা আইনগত অবস্থান যাই হোক ভারতের কট্টরপন্থি গোষ্ঠীগুলোর সহজ লক্ষ্যবস্তু হয়ে উঠেছে।”ভারতের বিরোধী নেতারা অভিযোগ করেছেন, বিজেপি নির্বাচনকে সামনে রেখে ভোটারদের মেরুকরণে এই উচ্ছেদ ও বিতাড়ন নীতি গ্রহণ করেছে। বিরোধী এমপি অখিল গগৈ বলেন, “এই পদক্ষেপগুলো রাজনৈতিকভাবে লাভজনক এবং বিজেপির জন্য উপকারি।”