৭২ ঘণ্টায় মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকার ছয়টি দেশে ইসরায়েল হামলা চালিয়েছে। গত মঙ্গলবার কাতারের রাজধানী দোহায় বিমান হামলা চালিয়েছে দেশটি। ইহুদি রাষ্ট্রটির দাবি, দোহায় হামাস নেতাদের এক বৈঠককে নিশানা করে ওই বিমান হামলা চালিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবিত গাজার যুদ্ধবিরতি নিয়ে আলোচনার জন্য ওই বৈঠক বসেছিল।এই হামলায় অন্তত ছয়জন নিহত হন। তাঁদের মধ্যে হামাসের শীর্ষ নেতা খলিল আল–হায়ার ছেলে, তাঁর কার্যালয়ের পরিচালক, তিন দেহরক্ষী ও এক কাতারি নিরাপত্তাকর্মী রয়েছেন। তবে শীর্ষ নেতারা বেঁচে গেছেন বলে জানা গেছে।ইহুদি রাষ্ট্র ইসরায়েলের বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর উগ্রবাদী সরকার তাদের সীমান্তের বাইরে আরও বিস্তৃত অঞ্চলজুড়ে হামলার অংশ হিসেবে এই হামলা চালিয়েছে। গত ৭২ ঘণ্টায় কাতার ছাড়া আর পাঁচটি দেশকে নিশানা করে দেশটি হামলা চালিয়েছে। আর চলতি বছরে ইসরায়েলের হামলার শিকার সপ্তম দেশ হলো কাতার।গাজায় হামলা অব্যাহতশুধু গত সোমবার থেকে গাজায় ইসরায়েলি হামলায় অন্তত ১৫০ জন নিহত ও ৫৪০ জনের বেশি ফিলিস্তিনি আহত হয়েছেন।সোমবার নিহত হন ৬৭ জন এবং হাসপাতালে ভর্তি হন ৩২০ জন। এর মধ্যে ১৪ জন ত্রাণসহায়তা নিতে গিয়ে নিহত হন। অনাহারে মারা যান আরও ছয়জন, যাঁদের মধ্যে দুই শিশুও ছিল।মঙ্গলবার আরও ৮৩ জন নিহত ও ২২৩ জন আহত হন।বেপরোয়া ইসরায়েলি বাহিনী গাজা নগরীতে টাওয়ার ভবন ধ্বংস, অবকাঠামো নষ্ট ও মানুষকে ঘরছাড়া করছে। ফলে অনেকেই কোথাও আশ্রয় পাচ্ছেন না।২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে এ পর্যন্ত গাজায় ইসরায়েলের নৃশংস ও নির্বিচার হামলায় অন্তত ৬৪ হাজার ৬৫৬ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে অন্তত ৪০৪ জন অনাহারে মারা গেছেন। বহু মানুষ এখনো ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে আছেন।সোমবার স্থানীয় সময় বেলা একটায় ইসরায়েলি যুদ্ধবিমান লেবাননের পূর্বাঞ্চলীয় বেকা ও হারমেল এলাকায় হামলা চালায়। এতে অন্তত পাঁচজন নিহত হন।ইসরায়েল দাবি করেছে, তারা হিজবুল্লাহর অস্ত্রভান্ডার ও সামরিক স্থাপনায় আঘাত করেছে। তবে এ তথ্য স্বাধীনভাবে যাচাই করা যায়নি। এ হামলার ঘটনায় হিজবুল্লাহও কোনো মন্তব্য করেনি।গত নভেম্বরে করা যুদ্ধবিরতি চুক্তি লঙ্ঘন করে ইসরায়েল এই হামলা চালিয়েছে। তবুও ইসরায়েল প্রতিদিন লেবাননের দক্ষিণাঞ্চলে হামলা চালাচ্ছে এবং সীমান্তের পাঁচটি পোস্ট দখল করে রেখেছে।মঙ্গলবার আবারও বৈরুতের দক্ষিণে বারজা গ্রামের প্রবেশমুখে ইসরায়েল ড্রোন হামলা চালায়। এতে এক হিজবুল্লাহ সদস্য আহত হন।সিরিয়ায় হামলাসোমবার গভীর রাতে ইসরায়েলি যুদ্ধবিমান সিরিয়ার হোমসের বিমানঘাঁটি ও লাতাকিয়ার কাছে একটি সেনাক্যাম্পে হামলা চালায়। স্থানীয় লোকজন প্রবল বিস্ফোরণের শব্দ শুনেছেন। হামলার পরপরই ঘটনাস্থলে অ্যাম্বুলেন্স পাঠানো হয়। তবে হতাহতের কোনো খবর পাওয়া যায়নি।সিরিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ইসরায়েলি এই হামলাকে দেশটির সার্বভৌমত্বের সরাসরি লঙ্ঘন ও নিরাপত্তার জন্য হুমকি বলে নিন্দা জানিয়েছে।
২০২৪ সালের ডিসেম্বরে প্রেসিডেন্ট বাশার আল–আসাদের পতনের পর থেকে ইসরায়েল সিরিয়ায় শত শত হামলা চালিয়েছে। দখল করে নেওয়া গোলান মালভূমিতে নিজেদের দখলদারত্ব আরও বাড়িয়েছে।যুক্তরাজ্যভিত্তিক সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস জানিয়েছে, শুধু এ বছরই ইসরায়েল প্রায় ১০০ বার সিরিয়ায় হামলা চালিয়েছে। এর মধ্যে ৮৬টি বিমান হামলা ও ১১টি স্থল হামলা। এতে ১৩৫টি স্থাপনা ধ্বংস হয়েছে এবং ৬১ জন নিহত হয়েছেন।সোমবার রাতে তিউনিসিয়ার সিদি বউ সাইদ বন্দরে দাঁড়ানো অবস্থায় ‘গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা’–এর প্রধান জাহাজ ফ্যামিলি বোটে সন্দেহভাজন ইসরায়েলি ড্রোন হামলা চালানো হয়। এতে জাহাজে আগুন ধরে যায়। ২৩ মিটার লম্বা জাহাজটিতে ছয় যাত্রী ছিলেন। তবে আগুন দ্রুত নিয়ন্ত্রণে আনা হয়। এতে সবাই নিরাপদ ছিলেন।এই জাহাজ ৫০টির বেশি জাহাজের একটি বহরের অংশ, যাদের লক্ষ্য ইসরায়েলের গাজা অবরোধ ভাঙা। এতে ৪৪টির বেশি দেশের প্রতিনিধি রয়েছেন।মঙ্গলবার রাতে একইভাবে তিউনিসিয়ার জলসীমায় যুক্তরাজ্যের পতাকাবাহী আলমা নামের আরেকটি জাহাজে ড্রোন হামলা চালানো হয়। এতে জাহাজের ওপরের অংশে আগুন লেগে যায়। তবে এতে কোনো প্রাণহানি হয়নি।২০১০ সাল থেকে এ ধরনের বহর একাধিকবার গাজায় পৌঁছানোর চেষ্টা করেছে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ইসরায়েল আন্তর্জাতিক জলসীমায় সেগুলো আটকে দিয়েছে বা সেই বহরে আক্রমণ করেছে।প্রথমবারের মতো ইসরায়েল কাতারে আঘাত হেনেছে। প্রায় দুই হাজার কিলোমিটার দূরের এই হামলায় দোহায় প্রবল বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায় এবং কালো ধোঁয়া আকাশে উড়তে দেখা যায়।ইসরায়েল পরে দাবি করে, তারা ওয়েস্ট বে লাগুন এলাকায় হামলা চালিয়েছে। ওই এলাকায় বিদেশি দূতাবাস, স্কুল, সুপারমার্কেট ও আবাসিক ভবন রয়েছে।যুক্তরাষ্ট্রের অনুরোধে হামাস নেতারা কাতারে অবস্থান করছেন। এখানেই যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টকম নামের আঞ্চলিক সামরিক ঘাঁটি রয়েছে, যা হামলার স্থান থেকে মাত্র ৩৫ কিলোমিটার দূরে।গতকাল বুধবার ইসরায়েল ইয়েমেনের রাজধানী সানায় বিমান হামলা চালিয়েছে। হুতি বিদ্রোহীদের লক্ষ্য করে ওই হামলা চালানো হয়েছে বলে ইসরায়েল দাবি করেছে। হামলায় সানা বিমানবন্দর ক্ষতিগ্রস্ত হয়।এর আগে গত মে মাসে ইসরায়েল একই বিমানবন্দরে হামলা চালিয়েছিল। এতে বিমানবন্দরটি বেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। ২৮ আগস্টের হামলায় হুতি সরকারের প্রধানমন্ত্রী আহমেদ আল–রাহাবি ও আরও কয়েকজন শীর্ষ কর্মকর্তা নিহত হয়েছিলেন।